সমবায় হলো এমন একটি দর্শন যেখানে, সমমনাসম্পন্ন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যখন মেধা, শ্রম, পুঁজি বিনিয়োগ করে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টা করাই হলো সমবায়। মানুষ সৃষ্টির সেবা জীব। আর মানুষ কখনও একা থাকতে পারে না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘‘একলা মানুষ কখনোই পূর্ণ মানুষ হতেপারে না,
অনেকের যোগে তবেই সে ষোল আনা পেয়ে থাকে। ‘‘মানুষের এরকম একত্রে থাকা, একত্রে বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশ মোকাবিলা করা ইত্যাদি বিষয়ে থেকে মানুষ সমবায় বা কো-অপারেটিভ গঠন করে। একই উদ্দেশ্য সমবেতভাবে কাজ করার অর্থ হচ্ছে সমবায়। নিজেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য একই শ্রেণি ও পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত সমমনা কিছু সংখ্যক মানুষ যখন একত্রিত হয়ে কোন সংগঠন বাসংস্থা গঠন করে তখন ঐ সংস্থাকে সমবায় অথবা সমবায় সমিতি বলা হয়ে থাকে। মানুষের চারিত্রিক স্বভাব অনেকে মিলে একত্রে বাস করা। একলা মানুষ কখনোই পূর্ণ মানুষ হতে পারে না। দল বেঁধে থাকা, কাজ করা মানুষের ধর্ম বলেই সেই ধর্ম সম্পূর্ণভাবে পালন করাতেই মানুষের কল্যাণ, তার উন্নতি। প্রাচীন সমাজেও সমবায়ীপ্রচেষ্টা লক্ষনীয়। সমবায় সংগঠনের সকল সদস্যের সমান অধিকার। এখানে ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষের পার্থক্য নেই। সমবায়ে সদস্যরা পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে নিজেদের নিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করার লক্ষ্যে সমিতি গঠন করে। সংগঠনের সকল সদস্যের একসাথে সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। কেননা সদস্যরা একে অপরের মঙ্গলের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময় করে। সহযোগিতা ভোগি ও সহযোগিতা প্রদানকারী উভয়ই সংগঠনের অভিন্ন অংশ যার ফলে তাদের স্বার্থের সংঘাত থাকে না।
প্রকৃত অর্থে সমবায়ের মূলনীতিই হলো সবার প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাবের সঞ্চার ঘটানো। অর্থের কারণে মানুষ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত তারা ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মানুষ যুগে যুগে বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে, তার মধ্যে একটি অন্যতম এবং বিশ্বের কোটি মানুষের স্বীকৃত মাধ্যমের নাম সমবায়। পরিশ্রমী সংগ্রামী মানুষের আত্মবিশ্বাসের জায়গা সমবায়। শ্রমজীবী উৎপাদনশীল মানুষদের মনে ‘আমরাও পারি’ এই সত্যকে জাগিয়ে তোলে। এইপ্রেক্ষাপটে সমবায় সমিতি একটি সাধারণ প্রতিষ্ঠান নয়। সমবায় সমিতি এমন একটি জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক আর্থ-সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে থাকে
ক. গণতন্ত্র
খ. সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টা
গ. খাদ্য নিরাপত্তা
মানুষের দারিদ্র দূরকরতে হলে সমবায়ের বিকল্প নেই।
যথাযথ নীতি ও সার্বিক সহায়তা পেলে সমবায় খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এবংক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ভূমিকা পালন করতে পারে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য একটি সমবায় সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একটি সমবায় সমিতিতে যেহেতু.সদস্যদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জমা করার এবং সমবায় সমিতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে সেহেতু সদস্যরা তাদের সঞ্চয়কৃত টাকার নিশ্চয়তা পেয়ে থাকেন। সমবায় সমিতিতে সকল সদস্যেরসিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকায় সমিতির পূঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সদস্যদের মতামত থাকে যা অন্যান্য কোন ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। সমবায়ের আবেদন ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয় বরং সমষ্টি কেন্দ্রিক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়েছিলেন সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘সমবায়নীতি-১’ প্রবন্ধে বলেছেন-
‘আমাদের টাকার অভাব আছে একথা বলিলে সবটা বলা হয় না। আসল কথা, আমাদের ভরসার অভাব। তাই আমরা যখন পেটের জ্বালায় মরি তখন কপালের দোষ দেই। আমাদের নিজের হাতে যে কোন উপায় আছে একথা ভাবতেও পারি না। যে দেশে গরীব ধনী হইবার ভরসা রাখে- সে দেশে সেই ভরসাই একটা মস্ত ধন।’ সমবায়ের মূলমন্ত্রও তাই।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সমবায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সদস্যদের ভেতর সাম্য, মৈত্রী সহযোগিতা বজায় থাকলে সমবায় সফল হতে বাধ্য। দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থানসৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে সমবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমবায়ের মাধ্যমেই স্বনির্ভর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাসম্ভব। তাই বলতে চাই সমবায়ই পারে সাধারণের জীবনে সমৃদ্ধি আনতে। তাই বাংলাদেশের ২০০১ সালে প্রণীত সমবায়আইন/২০০১ (সংশোধিত/২০০২,সংশোধিত/২০১৩)-এর বিধান অনুযায়ী উপরে বর্ণিতশিরোনামের সমবায় ও উহার উপ-আইনসমূহ যথারীতি সমিতি নিবন্ধিত হয়েছে। আমি সমিতির কল্যান কামনা করি এবং সবাইকে নিয়ে যেন আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি এ আশাবাদ আমি সকলের নিকট ব্যক্ত করি। আল্লাহ হাফেজ।